উৎসব মানেই দুঃখকষ্ট, দুশ্চিন্তা ভুলে গা ভাসিয়ে দেওয়া৷ প্রায় সব দেশে, সব সংস্কৃতিতে নানা ধরনের উৎসবের চল রয়েছে৷ ইটালির ভেনিস শহরে বিখ্যাত কার্নিভালের অনুপ্রেরণায় চলছে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিনব, রহস্যময় এক উৎসব৷
কমাত্র জলপথেই অতিথিরা খালপাড়ের অট্টালিকা ভবনে৷ সেখানেই বাৎসিরক ‘বালো দেল ডোজে'-এর মঞ্চায়ন হয়৷ ভেনিস শহরের এক কিংবদন্তির অনুপ্রেরণায় লেখা এই নাটক৷ আজ প্রায় ৪০০ অতিথি এসেছেন, সবাই ছদ্মবেশে৷ কস্টিউম ছাড়া প্রবেশ যে নিষেধ! ইটালীয় অভিনেত্রী মোনিকা মিলানেসে-ও তাঁদের মধ্যে আছেন৷ এই নিয়ে দ্বিতীয় বার তিনি এখানে এসেছেন৷ মোনিকা বলেন, ‘‘আপনার মনে হবে, আপনি যেন একটি চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছেন৷ শুধু দর্শক হিসেবে নয়, গোটা পরিবেশে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন৷''
আন্টোনিয়া সাউটার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন৷ গত ২১ বছর ধরে তিনি গোটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছেন৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই কস্টিউম ডিজাইনার শুধু শো-এর কস্টিউম তৈরি করেন না, অতিথিদের পোশাকও আসে তাঁর কাছ থেকে৷ একমাত্র আন্টোনিয়া সাউটার-এর তৈরি পোশাক পরেই ‘বালো দেল ডোজে'-তে অংশ নেওয়া যায়৷ আন্টোনিয়া সাউটার বলেন, ‘‘এই সব কস্টিউম আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে চলে যায়, কল্পনার জগতে৷ এই জগত বড়ই মনোরম৷ এখানে সবাই নিজেকে যে কোনো রূপ দিতে পারেন, যেমন খুশি আচরণ করতে পারেন৷''
পাঁচ দিন আগে মোনিকা মিলানেসে আন্টোনিয়া সাউটার-এর স্টুডিওতে নিজের জন্য কস্টিউম খুঁজতে গিয়েছিলেন৷ দেড় হাজারেরও বেশি পোশাক সেখানে রয়েছে৷ ১৯৯৪ সাল থেকে সাউটার ‘বালো দেল ডোজে'-এর মঞ্চায়ন করে চলেছেন৷ প্রতি বছরই নতুন পোশাক ও মুখোশ যোগ হয়৷ ভেনিসের ঐতিহ্যবাহী কস্টিউম থেকেই অনুপ্রেরণা পান তিনি৷ সাউটার বলেন, ‘‘আমার কস্টিউম কখনো অতীত ও আধুনিক যুগের মিশ্রণ, আবার ভবিষ্যতের ছোঁয়াও থাকে৷''
কয়েক ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর মোনিকা মিলানেসে অবশেষে পছন্দের একটি পোশাক খুঁজে পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটির মধ্যে কার্নেভালের ছাপ রয়েছে, অথচ রুচিশীল এবং নারীসুলভ৷ মনে হয় যেন হীরার নেকলেস পরেছি৷''
এমন পোশাকের ভাড়া এক হাজার ইউরো পর্যন্ত হতে পারে৷ টিকিটের মূল্য আড়াই হাজার ইউরো পর্যন্ত হতে পারে৷ এই অঙ্কের অর্থ দিলে টিকিটের সঙ্গে ৫ কোর্স ভোজও পাওয়া যায়৷ অতিথিদের প্রতিক্রিয়া কী? কেউ বলেন, ‘‘প্রচণ্ড দাম, হাস্যকর ব্যাপার, কখনো আর এমন করবো না৷'' তবে আরেকজনের মতে, স্বপ্ন সস্তার হতে পারে না, স্বপ্নের দাম স্থির করা যায় না৷ সেই সুরে সুর মিলিয়ে আরেক দর্শক বলেন, ‘‘জীবন ও উত্তেজনার সৌন্দর্য এমন এক বিষয়, যার জন্য পয়সা খরচ করতে খারাপ লাগে না৷''
অনেক অতিথি মুখোশের আড়ালে মুখ লুকিয়ে রাখেন৷ বিশেষ করে খ্যাতিমান লোকেরা একটি সন্ধ্যায় নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে চান৷ খ্যাতিমান অথবা সাধারণ – সব অতিথিই অন্যের ভূমিকায় এক খেলায় মেতে উঠে মজা পান৷ একজন বললেন, ‘‘আমি নিজের জিনস ও সোয়েটার না পরায় নিজেকে আরও সুন্দর লাগছে, অ্যাডভেঞ্চারের জন্য আমি আরও প্রস্তুত৷''
ইটালীয় অভিনেত্রী মোনিকা মিলানেসে বলেন, ‘‘বাতাসে একটা ‘স্পিরিট' টের পাচ্ছি৷ ভেনিসের কার্নিভালের আবহ সৃষ্টি হয়েছে৷''
অন্য কোথায় স্বয়ং কাসানোভা-র সঙ্গে ফ্লার্ট করার সুযোগ পাওয়া যায়? একমাত্র ‘বালো দেল ডোজে'-তেই তা সম্ভব৷ মোনিকা মিলানেসে-র কাছে এ যেন অতীতের আড়ম্বরের জগতে বেড়াতে যাবার মতো অভিজ্ঞতা৷
Post a Comment
দয়া করে এখানে আপনার মূল্যবান মতামত রেখে যাবেন। আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের নতুন কিছু লেখার জন্য উৎসাহিত করবে।